Pages

Finance and Travel Ideas

Wednesday 28 February 2018

একলব্যের গুরুদক্ষিণা।

সবাই  তো  জানেন  যে  মধ্যম  পাণ্ডব  অর্জুন  একজন  অসাধারণ  তীরন্দাজ  ছিলেন। কিন্তু  অর্জুনের  থেকেও  একজন  দক্ষ  তীরন্দাজের  উল্লেখ  আছে  মহাভারতে।  তার  নাম  একলব্য।  একলব্য  ছিলেন  নিষাদ বংশের  সন্তান  অর্থাৎ ব্যাধ।  একলব্যের মনে প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল দ্রোণাচার্যের  কাছে অস্ত্রশিক্ষা নেবেন। কিন্তু দ্রোণাচার্য তাকে আশ্রম থেকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত নয় বলে। এর ফলে তিনি অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু হাল ছাড়েননি। যে মাটির ওপর দিয়ে দ্রোণাচার্য হেঁটে গেছিলেন সেই মাটি দিয়ে গুরু দ্রোণাচার্যের মূর্তি বানিয়ে তপস্যা শুরু করলেন। সেই মূর্তিকেই গুরু মানলেন এবং তীর ধনুক চালানো অভ্যাস করতে লাগলেন। শৃঙ্খলা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রমে তিনি অর্জুনের থেকেও দক্ষ তীরন্দাজ হয়ে উঠলেন। কোন প্রাণীকে না দেখে শুধুমাত্র তার আওয়াজ শুনেই তাকে তীরবিদ্ধ করতে পারতেন। একটি  কুকুর তাকে অস্ত্রসাধনার সময় ঘেউ ঘেউ করে ডেকে বিরক্ত করত। তিনি তীর দিয়ে তার মুখটাকে এমনভাবে শরবিদ্ধ করে দিলেন যে সে আর ডাকতে পারবে না কিন্তু মরবেও না।

একদা গুরু দ্রোণাচার্যের  সঙ্গে কৌরব ও পাণ্ডব রাজকুমারেরা বনের মধ্যে অস্ত্র শিক্ষা করছিলেন। যে যার নিজের নিজের অভ্যাসে মন দিয়েছেন সবাই। এমন সময় একটি কুকুরকে আসতে দেখে সবাই হতবাক হয়ে যান । কারণ সেই কুকুরের মুখ ছিল বেশ কয়েকটি শরবিদ্ধ! মুখে অতগুলো তীর গেঁথে থাকার পরেও কুকুরটি বেঁচে আছে কী করে, সেই ভাবনায় অস্থির হলেন সবাই এবং বুঝতে পারলেন, যেই ব্যাক্তি এমন কাজ করতে পারেন তিনি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর! এর পরেই সশিষ্য গুরু দ্রোণাচার্য বনের গভীরে প্রবেশ করলেন। পাণ্ডবেরা একলব্যকে খুঁজে বার করলেন এবং অর্জুন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তুমি কার কাছে অস্ত্র শিক্ষা লাভ করেছ?" উত্তরে একলব্য বললেন, "দ্রোণাচার্য।" রাগে কাঁপতে কাঁপতে অর্জুন ফিরে এলেন এবং দ্রোণাচার্যকে বললেন, "আপনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আপনার আমাকে বিশেষভাবে অস্ত্রশিক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তা না করে আপনি অন্য আরেকজনকে তীরন্দাজি শিখিয়েছেন এবং আমার থেকেও দক্ষ বানিয়েছেন।" দ্রোণ অবাক হয়ে গেলেন এবং বুঝতে পারলেন না অর্জুন কার কথা বলছেন। যাই হোক, তিনি অর্জুনকে সাথে নিয়ে একলব্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। একলব্য তাঁদের দুজনকেই স্বাগত জানালেন। সেই মূর্তির কাছে নিয়ে গেলেন যাকে গুরু মেনে দিনের পর দিন তিনি অভ্যাস করেছেন। তখন দ্রোণাচার্য বললেন, "আমি মনে করেছিলাম অর্জুন আমার শ্রেষ্ঠ শিষ্য। কিন্তু এখন দেখছি তুমিই আমার শ্রেষ্ঠ শিষ্য এবং অর্জুনের থেকে অনেক বেশী দক্ষ তীরন্দাজ।" তখন একলব্য শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রশ্ন করলেন, "গুরুদেব, আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?" তখন দ্রোণাচার্য উত্তর দিলেন, "আমাকে গুরু মেনে যখন তুমি এতটা দক্ষতা অর্জন করেছ, আমি গুরুদক্ষিণা হিসাবে তোমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি চাইছি।" একলব্য জানতেন যে তিনি যদি গুরুদক্ষিণা হিসাবে তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি দেন তাহলে তিনি আর তীর ধনুক চালাতে পারবেন না। তবুও নির্দ্বিধায় তিনি ছুরি বার করে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি কেটে দ্রোণাচার্যকে গুরুদক্ষিণা দিলেন। অর্জুনও মনে মনে খুশি হলেন যে তার আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রইল না।

একলব্যকে শিষ্য হিসাবে প্রথমেই যদি দ্রোণাচার্য গ্রহণ করতেন তাহলে মহাভারতের কাহিনী হয়ত কিছুটা ভিন্ন হতো।

No comments:

Post a Comment