Pages

Finance and Travel Ideas

Monday 19 February 2018

মানিক মাঝির গল্প।

গ্রামের নাম কুসুমপুর। রাত অনেক। কিন্তু মানিক মাঝির চোখে ঘুম নেই। এভাবে চলতে থাকলে ভিটেমাটি সবই যাবে। পথে বসতে হবে পরিবার নিয়ে। মাছের ব্যবসায় যে এত মন্দা হবে, কে ভেবেছিল। আশেপাশের গ্রাম থেকে দুএকটা আত্মহত্যার খবর যখন কানে আসে, শরীরটা শিউড়ে ওঠে। পাশে বউ ছন্দা আর ছেলে ভুতো ঘুমিয়ে। মানিক উঠে বসল। ভবিষ্যতে কি করবে ভাবতে থাকে। সংসার চালানো, ছেলের পড়াশোনা। একে তো পুকুরগুলোতে সেইভাবে মাছ উঠছে না, তার উপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত নরেন ব্যবসার অনেকগুলো টাকা মেরে তাকে আরও বসিয়ে দিয়ে গেছে। কি উপায়? শুনশান রাত। দূরে মনে হয় একটা শেয়াল ডাকছে। মানিক ভাবতে থাকে। ভাবতে ভাবতে চোখটা যেন লেগে আসে প্রায়। সারাদিনের ক্লান্তির জন্য হয়ত।
হঠাৎ একটা চিন্তা তার মাথায় আসে। কাজটায় বেশ ঝুঁকি আছে। কিন্তু এছাড়া তার হয়ত উপায়ও নেই। ডুমুরজলা বলে গ্রামের যে জলাটা আছে, সেখানে রাত্তির করে মাছ ধরলে কেমন হয়? এক সময় অনেক মাছ পাওয়া যেত, আর রাতের বেলা কোন লোক থাকবে না, যা পাওয়া যাবে সবই তার। কিন্তু গাঁয়ের লোকেরা বলে জলাটায় নাকি অপদেবতা আছে। আগেও রাতে মাছ ধরতে যাবার কথা ওঠায় অনেকেই বারণ করেছে। 'তেনাদের' অনেকেই ভয় পায় বটে। কিন্তু মানিক এখন মরিয়া। অভাবের তাড়নার জন্যই হয়ত। চকিতে ছিপ, গামছা, আর মাছের থলেটা বগলদাবা করে বেরিয়েই পড়ে মানিক। ঘুমের ঘোরেই যেন একটু পাশ ফিরে শোয় ছন্দা। তার বেরিয়ে যাওয়াটা টের পায় না।

হনহন করে হাঁটতে থাকে মানিক। তার ঘর থেকে জলা নেহাত কম দূর নয়। ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই কানে আসে না। জলায় পৌঁছে একটা গাছের তলায় বসে জলে ছিপ ফেলে। চারদিকে বেশ চাঁদের আলো আছে। নাহ, বুদ্ধিটা খারাপ নয়, রুই, পোনা, কই, এটা ওটা উঠতেই লাগল। মানিকের মনে আনন্দ আর ধরে না। অনেকদিন পর সে ছন্দা আর ভুতোর মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারবে। আর গোটাকয়েক হলেই হবে। উল্লসিত মনে মানিক ছিপ ফেলে। এবারে মনে হয় বড় মাছ। ওরেব্বাস, কি ভারি মাইরি! ছিপ বেঁকে যাচ্ছে। মানিকও ছাড়বে না, হার মানবার পাত্র নয়। ছিপ ধরে টানতে থাকে। মাছটা অসম্ভব ভারি। মাছই তো? না অন্য কিছু? সে সমস্ত শক্তি দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে টান মারে। কি একটা যেন ফুটবলের মত জিনিস জল থেকে ছিটকে উঠে আসে। মানিক টাল সামলাতে না পেরে আছাড় খেয়ে পড়ে। পড়বি তো পড় জিনিসটা তার মাথার পাশেই পড়ে। কি ওটা? একি দেখছে মানিক? এতো একটা কাটা মুণ্ডু! আর মূখটা অবিকল তারই মতো। তফাৎ শুধু এইটাই, মুণ্ডুটার আগুনে চোখগুলো বীভৎসভাবে বিস্ফারিত হয়ে তার দিকে চেয়ে রয়েছে আর ঠোঁটের দুই কোণ দিয়ে দুটো ধারালো দাঁত বেরিয়ে রয়েছে, যা বেয়ে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে। একটা রক্ত জল করা হাসির শব্দ শুনতে পেল মানিক। তার আর কিছু মনে নেই।
ভোরবেলা গাঁয়ের লোকেরা মানিকের মৃতদেহটা জলার ধার থেকে উদ্ধার করল। শরীর থেকে সমস্ত রক্ত যেন কেউ শুষে নিয়েছে। মুখটা ফ্যাকাসে, চোখগুলো যেন ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। রহিম খুড়ো মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, "ছাওয়ালটারে অনেক বারণ করসিলাম, শুনল না।" ছন্দা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে একটা বুকফাটা আর্তনাদ করে নিথর দেহটার বুকের ওপর আছড়ে পড়ল।

2 comments: