Pages

Finance and Travel Ideas

Saturday 2 March 2019

ছবি (সত্যি ঘটনা অবলম্বনে)।

প্রদীপ ও জয়ন্ত ছোটবেলা থেকেই খুব বন্ধু। যাকে বলে জিগরি দোস্ত। দুজনেরই বারুইপুরে বাড়ি। তারা একই স্কুল এবং কলেজে পড়াশোনা করেছে এবং একসাথে খেলাধুলাও করেছে। কিন্তু ছাত্রজীবন আর কর্মজীবন এক নয়। কর্মসূত্রে হঠাৎই প্রদীপকে বাইরে যেতে হল। তারপর বহু বছর দুজনের মধ্যে চিঠি ছাড়া কোন যোগাযোগ ছিলনা।

আচমকাই প্রদীপ জয়ন্তের কাছ থেকে চিঠি পেল যে তার বাবা মারা গেছেন। মারা যাবার কারণ কিছু চিঠিতে উল্লেখ করা ছিল না। চিঠিটা পেয়ে প্রদীপ কিছুটা ধন্দে পড়ে গেল। তার ছোটবেলার বন্ধুর বাবা গত হয়েছেন, তার তো যাওয়া উচিত। শেষ পর্যন্ত যাবে বলেই ঠিক করে ফেলল। 

বারুইপুরে পৌঁছেই জয়ন্তের বাড়ির দিকে রওনা হল প্রদীপ। পথেই একটা চায়ের দোকানে জয়ন্তের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। একজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, বোধহয় নিমন্ত্রণই করছিল। প্রদীপকে দেখে একটু হাসল, চায়ের দোকানে এক কাপ চা খাওয়াল।

কথায় কথায় প্রদীপ জিজ্ঞাসা করল, “কিরে, কি করে হল এসব? কাকু তো সুস্থই ছিলেন।“
জয়ন্ত উত্তর দিল, “বয়সে যা হয় আরকি।“ বলে মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে নিল। ব্যাপারটা কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হল জয়ন্তের। কিন্তু সে আর কিছু প্রশ্ন করল না।

দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেল। প্রদীপ আর খুব বেশিদিন বারুইপুরে থাকতে পারবে না, কাজে যোগ দিতে হবে। জয়ন্তের বাড়িতে বাবার শ্রাদ্ধশান্তির জোগাড় চলছে। তাকে সব একাই সামলাতে হচ্ছে, প্রদীপও তাকে বন্ধু হিসেবে সাধ্যমত কাজে কর্মে সাহায্য করছে।

জয়ন্তদের বিরাট দালানবাড়ি এবং তার অনেকগুলি ঘর। তার বাবার একটি ছবি এই ঘরগুলির মধ্যে একটি ঘরে রাখা ছিল। তখন সন্ধ্যে পেরিয়ে গেছে। জয়ন্ত প্রদীপকে বলল, "চল, বাবার ছবিটা দোতলার ঘর থেকে নিয়ে আসি।" প্রদীপ তার সঙ্গে দোতলায় সেই ঘরে এল। দরজা খোলাই ছিল। ঘরে ঢুকেই তার যেন কেমন একটা অবর্ণনীয় অনুভূতি হল। এঘরে যেন না ঢুকলেই ভালো হত।

জয়ন্ত সুইচ টিপে আলো জ্বালাল। দেওয়ালে মৃত ব্যক্তির ছবিটা টাঙানো ছিল। ছবিটার দিকে তাকিয়ে যেন প্রদীপের গাটা ছমছম করে উঠল। কেমন যেন ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। সে চট করে চোখ সরিয়ে নিল। মাথার মধ্যে এই চিন্তাটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, কতক্ষণে এই ঘরটা থেকে বেরোতে পারবে।

হঠাৎই জয়ন্ত প্রদীপকে বলল, "এই ঘরটা তো এখন আর কাজে লাগছে না, তুই ঘর থেকে বাবার ছবিটা নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়া, আমি দরজার চাবিটা নিয়ে আসি।" এই বলে সে নিচে চলে গেল। তার কথামত প্রদীপ দেয়াল থেকে উক্ত ছবিটি নামিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে।

ঘরের আলোর সুইচটা ঘরের দরজা থেকে বেশ আগে ছিল। অর্থাৎ আলো নিবিয়ে তাকে বেশ খানিকটা অন্ধকার পেরিয়ে আসতে হবে। আলো নেবানোর পর মুহূর্তেই তার মনে হল যেন যে জায়গা থেকে সে ছবিটি নিয়ে এল, সেখান থেকে তাকে কেউ চুম্বকের মত টানছে। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। সে প্রাণপণ চেষ্টা করল যাতে কিছুতেই সেই ছবি রাখা জায়গাটার দিকে না দেখতে হয়। কিন্তু তবুও সেই একই অনুভূতি। প্রাণপণ চেষ্টায় এবং মনের জোরে নিজের শরীরটাকে সে টানতে টানতে ঘরের বাইরে নিয়ে এল। সারা শরীর ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। কোনরকমে হাঁপাতে হাঁপাতে সে নিচে নামল। চিৎকার করে “জয়ন্ত, জয়ন্ত” বলে ডাকতে লাগল। থরথর করে কাঁপছে। জয়ন্ত ছুটতে ছুটতে এল। অবস্থা দেখে তাকে একগ্লাস জল এনে দিল। জল খেয়ে কিছুটা স্বস্তি বোধ করল প্রদীপ এবং বন্ধুকে সব বলল। বন্ধু সব শুনে কিছুক্ষণ থম মেরে রইল। তারপর তাকে বলল, “তোকে আমি আগে বলিনি। আমার বাবার অপঘাতে মৃত্যু হয়েছিল।“

প্রদীপ জিজ্ঞাসা করল, ”কি ভাবে?”

জয়ন্ত উত্তর দিল, “বাবার ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতি হওয়াতে দেনায় পড়ে গেছিল। সবসময় চিন্তিত থাকত এই ব্যাপার নিয়ে। রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাত। একদিন বোধহয় ওভারডোজ হয়ে গেছিল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা হড়কে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই শেষ। ডাক্তার ডাকারও সময় পাওয়া যায়নি।“

সমস্ত শুনে প্রদীপ কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল। শ্রাদ্ধশান্তি হয়ে গেলে সে আবার কাজে তার শহরে ফিরে গেল। তবে এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বহুদিন তার মনে দাগ কেটে বসে ছিল। 

(গল্পের কারণে কিছু তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে।)