Pages

Finance and Travel Ideas

Saturday 23 June 2018

বৈশিষ্ট্য।

সুদেষ্ণার খুবই অদ্ভুত লেগেছিল যখন এত খেলনা থাকতে মেয়ে রিমি ওই পুতুলটা কিনে দেবার জন্যই বারবার করে বায়না করছিল। মেয়ে খুবই জেদি আর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মার কাছেই তার সব চাহিদা। এমনিতে হট হুইলস বা জি আই জো বেশি পছন্দ করে, বারবি ডলও অপছন্দ নয়, কিন্তু আজকে নিউ মার্কেটের এই খেলনার দোকানে এসে সে যেন কিছুতেই ওই অদ্ভুত পুতুলটার থেকে চোখ সরাতে পারছিল না। পুতুলটা একটা মেয়ে পুতুল কিন্তু মুখের অভিব্যক্তি একদমই আর পাঁচটা সাধারণ পুতুলের মত নয়। কেমন যেন ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে, চোখগুলোও যেন বিস্ফারিত। হঠাৎ দেখলেই যেন গাটা কেমন শিউরে ওঠে। যাই হোক, মেয়ের বায়না সামলাতে না পেরে তিনশ টাকা দিয়ে কিনেই দিল পুতুলটা। কিন্তু মনটা যেন কেমন খচখচ করতে লাগল।

অনেকক্ষণ পুতুলটা নিয়ে খেলার পর রাত্রিবেলা পুতুলটা মাথার কাছেই নিয়ে শুয়ে পড়ল রিমি। সে আজকে খুবই খুশি মা তার বায়না মেনেছে বলে। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল তার। করিডোরের আলোটা যেন কে জ্বালিয়ে দিয়েছে আর কেউ যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে দরজার কাছে। ভালো করে দেখার আগেই যেন মূর্তিটা অদৃশ্য হয়ে গেল। আর লাইটটাও কেউ নিবিয়ে দিল। বাড়িতে তো সে আর মা ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু মা তার সাথে এরকম করবে কেন? হঠাৎই তার পুতুলটার ব্যাপারে খেয়াল হল। ওটাকে সে শুইয়ে রেখেছিল, কিভাবে যেন দাঁড়িয়ে পড়েছে। পুতুলটাকে ঠিকঠাক শুইয়ে সে নিজেও শুয়ে পড়ল। আবার কিছুক্ষণ আধা ঘুম আধা জাগা অবস্থা। হঠাৎ মনে হল ঘরের ঠিক মাঝখানে কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেডল্যাম্পটা জ্বালিয়ে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল রিমি। কিন্তু কেউ নেই। একবার ভাবল মাকে ডাকবে। আবার একটু দ্বিধাবোধ করল। কি দরকার, বকাবকি করবে, সারাদিন অফিসে অজস্র কাজ করতে হয়। তারই মনের ভুল হবে। আবার সাহস করে শুয়ে পড়ল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তার মনে হল, তার একদম ঘাড়ের কাছে কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে। পাশ ফিরেই দেখল পুতুলটা একদম বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু তিনফুটের পুতুল যেন ছফুট লম্বা হয়ে গেছে আর তার মুখের অভিব্যক্তি যেন আরও হিংস্র হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সে রিমির দিকে এগিয়ে আসছে। গলায় যেন ফাঁসের মত কী একটা চেপে বসল। অন্ধকারের মধ্যে যেন আরও ঘন অন্ধকার নেমে আসছে। রিমির নিথর শরীরটা বিছানার ওপর এলিয়ে পড়ল।

পরের দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সুদেষ্ণার কেমন যেন একটা খটকা লাগল। রিমির স্কুলের দিনে কোনদিন তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হয় না, কিন্তু আজকে তো তার কোন সাড়াশব্দ নেই। রিমির ঘরের কাছে গিয়ে দেখল দরজাটা আলতো করে ভেজানো। একটু ঠেলা দিতেই পুরোপুরি খুলে গেল। রিমির নিষ্প্রাণ দেহটা এলিয়ে পড়ে রয়েছে বিছানায়। চোখগুলো যেন ঠেলে বেরিয়ে এসেছে আর তার গলাটা দুহাতে জড়িয়ে ধরে পুতুলটা যেন একটা পৈশাচিক হাসি হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। একটা মর্মান্তিক আর্তনাদ করে সুদেষ্ণা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল।