Pages

Finance and Travel Ideas

Sunday 23 September 2018

বিভূতিভূষণের জীবনের সত্য ঘটনা।

"বিভূতিভূষণের বৈঠকি গপ্পো" থেকে প্রাপ্ত। একটু ছোট করে লিখলাম। এইটা ঘাটশিলার কাছে সুবর্ণরেখা নদীর পারে ঘটেছিল। বিভূতিভূষণ পুজোর ছুটিতে ঘাটশিলা ভ্রমণে গেছিলেন। প্রায়ই সেখানে যেতেন কারণ তাঁর ছোট ভাই নুটুবিহারী সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। বিভূতিভূষণ ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক আর ঘাটশিলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা কে না জানে। আর উনি ছিলেন অত্যন্ত আলাপী মানুষ, অল্প সময়ের মধ্যেই লোকজনের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে ফেলতেন।

এমনি এক সন্ধ্যায় সবান্ধব বেড়াতে বেড়িয়েছিলেন। দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেল, তাঁর বাড়ি ফেরার নাম নেই। বাড়ির লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়ল। রাত দশটা বেজে গেল, তাই বাধ্য হয়েই ভাই নুটুবিহারী খোঁজ করতে বেরলেন। কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারল না। হঠাৎই বিভূতিভূষণ সবার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বাড়ি ফিরলেন। দুজন বন্ধু তাকে আলো নিয়ে পৌঁছে দিয়ে গেলেন। সবারই প্রচণ্ড কৌতূহল, কি হয়েছিল। খেতে বসে ঘটনাটা বর্ণনা করলেন।   

হাঁটতে হাঁটতে সুবর্ণরেখার ধার ধরে অনেকদুর চলে গেছিলেন। পূর্ণিমার রাত। শ্মশানঘাটের কাছে পৌঁছে গেছেন সবাই। হঠাৎ করে তাঁর মনে হল যেন দূরে একটা খাটিয়ায় শায়িত শবদেহ দেখতে পেলেন। অথচ তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন তারা তা দেখতে পেলেন না এবং বিভূতিভূষণের কথা বিশ্বাসও করলেন না। মনের ভুল বলে উড়িয়েই দিলেন। শুধু তাই নয়, বাড়ি ফেরার তাগাদা লাগালেন। রাত্রিবেলা শ্মশানে বেশিক্ষণ না থাকাই ভাল, এই যুক্তিও দিলেন কেউ কেউ। কিন্তু বিভূতিভূষণের অলৌকিক ব্যাপার জানার অদম্য কৌতূহল ছিল। এত সহজে তিনি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন। কিন্তু সঙ্গীরা তাকে একা কিছুতেই ছাড়বেন না। অগত্যা তাদের পিছন পিছন সাঁওতাল পাড়ার কাছে এসে তাঁর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সঙ্গীদের বললেন যে লোকালয় প্রায় এসেই গেছে, তারা এগিয়ে যান, তিনি একটু পরে যাচ্ছেন। সঙ্গীরা রাজি হলে তিনি লম্বা লম্বা পায়ে আবার শ্মশানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। দেখলেন সত্যিই একটা শবদেহ সমেত খাটিয়া পড়ে রয়েছে। কৌতূহলবশত কাছে গিয়ে দেখলেন শবদেহটা একটা ছেঁড়া কাঁথা দিয়ে ঢাকা আছে। আশেপাশে কেউ নেই। শবযাত্রীরা এদিক ওদিক কোথাও গেছে ভেবে হাঁকডাক করলেন, কিন্তু কোন সাড়া পেলেন না। হঠাৎ তাঁকে কেউ যেন বলল "যা না...... কাঁথাটা সরিয়ে দেখ।" বিভূতিভূষণ শিউড়ে উঠলেন। পিছন দিকে তাকালেন কিন্তু কণ্ঠস্বরের অধিকারীকে দেখতে পেলেন না। ভাবছেন পালাবেন কিনা। কিন্তু কৌতূহল সম্বরণও করতে পারলেন না। আবার সেই রহস্যজনক কণ্ঠস্বর, "যা, যা না, এগিয়ে যা...... কাঁথাটা সরিয়ে দেখ।" তাকে যেন কোন অলৌকিক শক্তি শবদেহটার দিকে টানছে। কাঁথাটা সরিয়ে দেখলেন একজন বয়স্ক পুরুষের মৃতদেহ। বড় বড় চোখ মেলে তাঁর দিকে চেয়ে রয়েছে মনে হল। আরও কাছে মুখ আনতেই ভয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন। মৃতদেহটার মুখাবয়ব একদম তাঁর মতন - অবিকল এক। যেন আয়নায় মুখ দেখছেন। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তিনি ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে বাড়ী ফিরে এলেন। এর কিছুদিন পরেই তিনি পরলোক গমন করেন।

(সংগৃহীত)