Pages

Finance and Travel Ideas

Tuesday 13 February 2018

শেষ ট্রেনের যাত্রী।

অফিসের কাজ শেষ করতে করতে বেশ দেরিই হল সুমন্ত্রের। একেই উইকএণ্ড, তার ওপর কাজ জমিয়ে রাখা একদমই পছন্দ না তার। অতএব দেরি। তড়িঘড়ি স্টেশনের দিকে রওনা হল সে। লাস্ট ট্রেনটা মিস করলে রাতটা প্ল্যাটফর্মেই শুয়ে কাটাতে হবে, যেটা মোটেও সুমন্ত্রের পছন্দ না। ভাগ্যক্রমে ট্রেনটা পেয়েই গেল সে। কামরাতে উঠেই জানলার ধারে একটা সিটে বসে পড়ল। স্টেশনের নাম ভুদেবপুর (কাল্পনিক), শিয়ালদহ থেকে পাক্কা দুঘণ্টার পথ। স্টেশন থেকে তার বাড়ি হেঁটে গেলে ১০-১২ মিনিটের রাস্তা, আর রিকশায় চাপলে ৪-৫ মিনিট। কিন্তু স্টেশনে নামতে না নামতেই ঝমঝম করে শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। ভুল করে সকালে আকাশ পরিস্কার দেখে ছাতাটাও আনেনি সে। তাই তাকে ভিজতেই হল। রিকশার জন্য আর সে অপেক্ষা না করে হেঁটেই রওনা হল। বৃষ্টির জন্য স্টেশন চত্বর একদমই ফাঁকা। ডেলি পাসেঞ্জারি করে বলে প্রত্যেকদিনই কাউকে না কাউকে সহযাত্রী হিসেবে পেয়েই যায় সে। কারো কারো বাড়ি তার বাড়ির রাস্তার পথেই। কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা। সে একাই স্টেশনে নেমেছে। কোনরকমে রুমালটা দিয়ে মাথা বাঁচিয়ে হাঁটতে শুরু করল।

আজ মনে হয় অমাবস্যা, চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুক্ষণ চলার পর বৃষ্টিটা একটু ধরল। স্টেশন পেরিয়ে ডানদিকে একটা বিরাট মাঠ পড়ে, মাঠের লাগোয়া শ্মশানও আছে। রাতে ওই জায়গাটা সবাই এড়িয়েই চলে। অনেক রকম অদ্ভুত আওয়াজ নাকি শোনা যায়। তবে সুমন্ত্র সাহসী মানুষ, এসব খুব একটা পাত্তা দেয় না। হাঁটতে হাঁটতে মাঠটা প্রায় অতিক্রম করে এসেছে, হঠাৎ মনে হল কেউ তার পিছন পিছন আসছে। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখল লম্বা মতন কে হেঁটে আসছে। হয়ত তাদের গ্রামেরই কেউ।হঠাৎই মনে পড়ল, ওদের পাড়ার ভবতোষদা বেশ লম্বা, সেই নয় তো? ভাবতে ভাবতেই জিজ্ঞাসা করল, "ভবতোষদা নাকি? এত রাতে? কোথা থেকে ফিরলেন?" কিন্তু কোন উত্তর নেই। আর লোকটা যেন চলার বেগ আরও বাড়িয়ে দিল। এবার কিন্তু সুমন্ত্র একটু ভয় পেল। সেও চলার গতি বাড়িয়ে দিল। কিন্তু ওকি! লোকটা যেন ক্রমশ আরও লম্বা হচ্ছে। আরও কাছে আসছে। সুমন্ত্রর গলা শুকিয়ে গেল। লোকটা যেন রণপা লাগিয়ে তাকে ধাওয়া করেছে। সুমন্ত্র উপায়ান্তর না দেখে দৌড়তে শুরু করল। লোকটাও পিছু ছাড়ছে না। অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে গেছে লোকটা। যেন দৈত্য। সুমন্ত্র জীবনে কোনদিন এত জোরে দৌড়েছে বলে মনে পড়ল না। তার বাড়ি আর বেশি দূর নয়। আরেকটু, আরেকটু...... হঠাৎই মনে পড়ল রাম নাম জপ করলে নাকি ভুত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তাই করতে করতে কোনরকমে নিজের বাড়ির দরজায় আছড়ে পড়ল। পাগলের মত দরজা ধাক্কাতে লাগল, "নীলিমা, নীলিমা! দরজা খোলো।" নীলিমা, তার স্ত্রী, দরজাটা খোলামাত্রই সে ঘরে ঢুকে সজোরে দরজাটায় খিল লাগিয়ে হাঁপাতে লাগল। নীলিমা কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করল, "কি হয়েছে? এত হাঁপাচ্ছ কেন?" সুমন্ত্র বলল, "আগে একগ্লাস জল।" বলে সোফায় এলিয়ে পড়ল। নীলিমা জল নিয়ে এলে জলটা খেয়ে একটু সুস্থ বোধ করল ও সমস্ত ঘটনাটা বলল। নীলিমা সব শুনে একটুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, "তুমি লোকটাকে প্রথমে ভবতোষদা ভেবেছিলে?" সুমন্ত্র বলল, "হ্যাঁ, কেন?" নীলিমা কিছুক্ষণ ইতস্তত করার পরে উত্তর দিল, "ভবতোষদা তো আজ সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে।" চমকে উঠল সুমন্ত্র। তবে কি ওটা তার প্রেতাত্মা ছিল?

No comments:

Post a Comment