Pages

Finance and Travel Ideas

Monday 5 February 2018

ভুতুড়ে বাস।

কলেজ ছুটি হবার পরে বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে গল্প করতে করতে অনন্যার সময়ের আর খেয়ালই ছিল না। হঠাৎই ঘড়ির কাঁটার দিকে নজর পড়ায় চমকে উঠল সে। এইরে, আজকে নির্ঘাত মার কাছে ঝাড় খেতে হবে। ইতিমধ্যে বাড়ি থেকে দুএকবার ফোনও এসে গেছে। যথারীতি সে বলেছে, "বন্ধুর বাড়িতে আছি, চলে আসব, চিন্তা কোরো না।" কিন্তু এবারে তার টনক নড়ল। আর দেরি করলে বাস পাবে না। তার বাড়ি ফেরার একটাই বাস, না পেলে দুতিনবার ট্রেন পালটানো। সে অনেক ঝক্কি। তাড়াতাড়ি বান্ধবীকে টাটা করে দিয়ে বাসের জন্য রওনা হল অনন্যা। বাসে উঠে মাকে কি জবাবদিহি করবে, সেটাই ভাবতে লাগল।
অভাবের সংসার। বাবা তার ছোট থাকতেই গত হয়েছেন। মাই তাকে কষ্ট করে মানুষ করেছে। মার বড়ই বাধ্য মেয়ে সে। কিন্তু আজকে সে বড় অন্যায় করে ফেলেছে। আর কোনদিনও করবে না। আসলে কলেজে আজ ক্লাস শেষ হয়ে লম্বা ছুটি পড়ে গেল। সেই আনন্দে গল্প করতে করতে খেয়ালই নেই।

বাসটা চলছে বেশ দ্রুতবেগে। কিন্তু অনন্যার কেমন যেন একটা খটকা লাগল। বাসের ভিতরে যেন একটা আলো আধারি তৈরি হয়েছে আর সহযাত্রীরা তার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকিয়ে দেখছে। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তার। কিন্তু জোর করে মনে সাহস সঞ্চয় করল। টেনশনে মানুষের অনেক সময় এরকম অনুভূতি হয়। শীতকালের কুয়াশার জন্য হয়ত এই আলো আধারি ব্যাপারটা তৈরি হয়েছে। সে খুব একটা পাত্তা দিল না।

হঠাৎই তার নজরে পড়ল বাসটা বেশ খালি হয়ে এসেছে। একে তো রাত অনেক, তার ওপরে বাস প্রায় লাস্ট স্টপেজের কাছাকাছি এসে গেছে। লাস্ট স্টপেজের আগের স্টপে সে ছাড়া সবাই নেমে গেল। এখন বাসে শুধু সে, ড্রাইভার আর কন্ডাক্টর। আচমকা বাসের সবগুলো আলো নিবে গেল। ব্যাপারটা অনন্যার কেমন লাগল। সে কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞাসা করল, "কি হল? বাসের সব আলো নিবিয়ে দিলেন কেন?" কন্ডাক্টর এর কোন উত্তর নেই। এমনকি সে মুখ ফিরিয়ে রইল। শীতের রাত বলে এমনিই লোকটা মাথায় একটা মাফলার জড়িয়ে রেখেছে, আর ঘুটঘুটে অন্ধকার বলে আরোই তার মুখটা বোঝা যাচ্ছে না। দুএকবার গায়ে ধাক্কা দিতে সে তার মুখটা অনন্যার দিকে ফেরাল। বিলীয়মান রাস্তার আবছা আলোতে তার মনে হল যেন একটা অন্তহীন গহ্বরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অনন্যার সারা শরীরে যেন একটা ঝাঁকুনি লাগল। সে ড্রাইভারের কেবিনের দিকে দৌড়ে গিয়ে আকুলভাবে চিৎকার করতে লাগল, "ও দাদা, গাড়ি থামান, ও দাদা!" ড্রাইভারের কোন বিকার নেই। বাসের থামারও কোন লক্ষণ নেই। বেশ কয়েকবার কাকুতিমিনতি করবার পর ড্রাইভারও তার দিকে ঘাড় বেঁকিয়ে তাকাল। চোখদুটোর গহ্বর যেন দুটি অগ্নিপিণ্ড। কি ভয়ংকর পৈশাচিক সেই দৃষ্টি! ছিটকে সরে এল অনন্যা। তবে কি মৃত্যু আসন্ন? না, এভাবে সে মরতে রাজি নয়। সমস্ত সাহস সঞ্চয় করে যে দরজায় কন্ডাক্টর দাঁড়িয়ে ছিল না, সেই দরজা থেকে চোখ বুজে মারল এক লাফ। উফ, শরীরটা যেন টুকরো টুকরো হয়ে গেল তার। পাশ দিয়ে ভুতুড়ে বাসটা ঝড়ের মত বেরিয়ে গেল। কোন দিকে গেল, কে জানে?
সকালবেলা অনন্যাদের পাড়ার শ্যামলবাবু বাজার করতে বেরিয়ে তার অজ্ঞান ও আহত দেহটা প্রথম দেখতে পান। শিগগিরিই তার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই অনন্যার মার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করা এবং থানায় মিসিং ডায়রি করা হয়ে গেছে। যাই হোক, কথায় কথায় জানা গেল বহু বছর আগে সেখানে ঠিক ওই দিনে একটা বাস দুর্ঘটনা হয়েছিল যাতে ড্রাইভার ও কন্ডাক্টর দুজনেই মারা যায়। দুজনেই নাকি মদ্যপ অবস্থায় ছিল। বাসে দ্বিতীয় লোক আর কেউ ছিল না।

No comments:

Post a Comment