Pages

Finance and Travel Ideas

Tuesday 16 January 2018

হানাবাড়ি।

অঞ্জনদের পাড়ায় একটা খুব পুরনো বাড়ি আছে। ওই বাড়ির লোকেরা নাকি এককালে খুব ধনী ছিল। এখন তাদের বংশধরেরা কেউই আর নেই। বাড়িটার দেখাশোনা করা বহুদিন ধরেই বন্ধ। বাড়িটার সম্পর্কে লোকজনের কৌতূহলের অন্ত নেই। কিন্তু বাড়িটা ভুতুড়ে বলে কেউ বাড়িটার ধারকাছ মাড়ায় না।
ছোটবেলা থেকেই অঞ্জনের খুব আগ্রহ বাড়িটার প্রতি। শুধু তার বাড়ির লোকেদের বারণের কারণেই সে বাড়িটায় কোনদিন ঢোকেনি। সেদিন তাড়াতাড়ি হঠাৎ স্কুল ছুটি হয়ে গেল। সে আর তার প্রিয় বন্ধু প্রকাশ বাড়ি ফিরছিল। বাড়িটা তাদের স্কুল থেকে ফেরার পথেই পড়ে। হঠাৎই অঞ্জন প্রকাশকে জিজ্ঞাসা করল, "হ্যাঁরে, এই পোড়ো বাড়িটা সম্বন্ধে তুই কিছু জানিস?" প্রকাশ সন্দিগ্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, "তেমন কিছু না। তবে বাড়িটা অভিশপ্ত। ওই বাড়ির যিনি মালিক ছিলেন, তিনি নাকি হঠাৎ পাগল হয়ে গেছিলেন। গুলি চালিয়ে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলে নিজেও আত্মহত্যা করেন। কেন?" অঞ্জন বলল, "না, ভাবছি বাড়িটার ভিতরে একদিন ঢুকে দেখব কি আছে।" প্রকাশ ভয় পেয়ে গিয়ে বলল, "না না, একদম না। ওই চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দে। ওটা ভুতুড়ে। চল বাড়ি যাই।" তার কথামত সঙ্গে কিছুটা গিয়ে অঞ্জন অনুভব করল বাড়িটা যেন তাকে তীব্রভাবে টানছে। ওই বাড়িটায় কিছু যেন একটা আছে, যা তাকে জানতেই হবে। সে হঠাৎ বুদ্ধি খাটিয়ে বলল, "প্রকাশ, আমি না বন্ধুর বাড়িতে কাল একটা দরকারি বই ফেলে এসেছি, তুই বাড়ি যা, আমি নিয়ে আসি।" প্রকাশ কিছুটা দোনামোনা করে হাঁটা শুরু করতেই অঞ্জন দৌড়ে সোজা ভুতুড়ে বাড়িটার সামনে হাজির। কাঠের গেটটা ক্যাঁচ করে শব্দ করে খুলে সে ভেতরে ঢুকল। বেশ বড় একটা বাগান আছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আগাছা জন্মেছে সর্বত্র। কিন্তু বাগান নিয়ে সে আগ্রহী নয়। সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে সে একটা হলঘর দেখতে পেল। সব জায়গায় খালি পুরু ধুলোর আস্তরণ, ঝাড়বাতিগুলোও ধুলোয় ঢেকে রয়েছে। দামি দামি আসবাবপত্র রয়েছে কিছু। বোঝাই যায়, এককালে অবস্থাপন্ন লোকের বাড়ি ছিল। হলঘরের আশেপাশের সবগুলো ঘর সে ঘুরে দেখল কিন্তু ভৌতিক কিছু তার চোখে পড়ল না। অঞ্জন মনে একটু সাহস পেল। সবই হয়ত আজগুবি গল্প।

ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখল অনেকগুলো ঘর আছে, তাদের মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোরই দরজা খোলা এবং ভেতরে উল্লেখযোগ্য কোন আসবাবপত্র নেই। তবে একটি ঘরের মেঝেতে প্রচুর পোড়া কাঠের টুকরো, ধুপকাঠি, এবং কয়েকখানা প্রদীপ পড়ে রয়েছে। এই ঘরে কি আগে পুজাআচ্চা হতো? বা তন্ত্রসাধনা? কে জানে কি ব্যাপার। এবারে অঞ্জন যে ঘরটির দরজা ভেজানো, সেটায় ধাক্কা দিল। দরজাটা খুলে যেতেই একটা হিমশীতল হাওয়ার পরশ যেন তাকে অবশ করে দিল। আর ঘরের মাঝখানে? একটি কঙ্কাল বসে রয়েছে। ঘরের পরিবেশটা যেন নিমেষে পরিবর্তিত হল। সব যেন আগের যুগে চলে যাচ্ছে, কঙ্কালটির আকৃতিতে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, দেখতে দেখতে সেটায় মাংস চাপল, পোশাক পরিচ্ছদ চলে এল। ঘরের মধ্যে যেন একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অঞ্জন দেখল তার সামনে একটা দৈত্যাকৃতি মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে, পোশাকআশাক আগেকার দিনের জমিদারবাড়ির মত, বাঁ হাতে একটা বন্দুক। চোখের দৃষ্টি? অত নিষ্ঠুর দৃষ্টি সে আজ পর্যন্ত দেখে নি। প্রতিহিংসার আগুনে চোখ দুটি যেন ধকধক করে জ্বলছে। মূর্তিটি তার দিকে এগিয়ে আসতেই সে পিছু হটল। নিচে নামার সিঁড়ির দিকে পিছতে লাগল। আরে, সিঁড়িটা গেল কই? এখান দিয়েই তো সে উঠেছিল। সবজায়গায় কাঠের রেলিং, কিন্তু নিচে নামার কোন পথ নেই। সামনে তাকিয়ে দেখে প্রেতমূর্তিটা তার দিকে বন্দুক তাক করছে। একটা হাড়কাঁপানো পৈশাচিক হাসির আওয়াজ সে শুনতে পেল। তার পিঠ রেলিঙে ঠেকে গেছে। সে রেলিঙে আরেকটু ভর দিতে যেতেই প্রায় একশ বছরের পুরনো ঘুণধরা কাঠের রেলিঙটা সশব্দে ভেঙে পড়ল। আর অঞ্জনের দেহটা প্রায় তিরিশ ফুট নিচে মেঝের ওপর আছড়ে পড়ে দুএকবার নড়েচড়েই অসাড় হয়ে গেল। প্রেতমূর্তিটাও সঙ্গে সঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে বাতাসে মিলিয়ে গেল। ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজ ছাড়া এখন চারদিক একদম নিস্তব্ধ।

No comments:

Post a Comment