Pages

Finance and Travel Ideas

Saturday 17 March 2018

কাবেরী।

স্ত্রীর মৃতদেহটা আঁকড়েই বসে ছিল পরিমল। দীর্ঘ পাঁচ বছর ক্যানসারে ভোগার পরে আজই ছিল তার জীবনের শেষ দিন। ডাক্তাররা অবশ্য অনেকদিন আগেই জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। এই মারণরোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই কঠিন। তবুও আশা ছাড়েনি পরিমল। কিন্তু.........

বন্ধুরা এসে ডাকাডাকি করাতে হুঁশ হল তার। এই ভাবে তো বসে থাকলে চলবে না। শ্মশানে গিয়ে শেষকৃত্যের কাজ করতে হবে।

শ্মশানে চিতাতে যখন কাবেরীর দেহটা তিলে তিলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, তখনও একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল পরিমল। মানুষের জীবন কত অনিশ্চিত, সেটাই হয়ত ভাবছিল। সে নিঃসন্তান, অতএব বাকি জীবনটা তাকে একাকিত্বের মধ্যেই কাটাতে হবে। পারবে কি সে?

বাড়িতে ফিরে এসে কিছুই ভালো লাগছিল না তার। চুপ করে ড্রয়িং রুমের সোফাটায় বসে ছিল। সাধারণত সে বেশি ধূমপান করে না, কিন্তু আজ পুরো দু প্যাকেট শেষ করে ফেলেছে। আজ খেতেও ইচ্ছা করছে না তার। আস্তে আস্তে উঠে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ঘুম আসছে না......

কাবেরীর সঙ্গে তার আলাপ কলেজ জীবন থেকে। বহুদিনের সম্পর্ক তাঁদের এবং আগাগোড়াই বড় মধুর। তাদের জীবনে হয়ত স্বচ্ছলতার অভাব কখনো সখন অনুভূত হয়েছে, কিন্তু আনন্দের কোন অভাব ছিল না।     

আস্তে আস্তে ঘুমে চোখ জড়িয়ে এল পরিমলের। সারাদিনের শ্রান্তির ফলেই হয়ত। হঠাৎ যেন মনে হল তাকে কেউ ডাকল। স্ত্রীলোকের গলার আওয়াজই মনে হল তার। ঠিক ব্যাপারটা বুঝতে পারল না সে। এতো রাতে তাকে কে ডাকবে? ওই আবার! "পরিমল, পরিমল......।" ঘাড় ঘুরিয়ে বারান্দার দরজাটার দিকে তাকাল সে। একি দেখছে সে? সাদা কাপড় পরা কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। এতো কাবেরী দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু তাও কি করে সম্ভব? সে তো আজকে নিজে তাকে দাহ করে ফিরেছে। এ কীরকম তার রূপ? মুখের কাছটা কিছুটা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু শরীরের বাকি অংশটার মধ্যে দিয়ে বারান্দার রেলিংগুলো দেখা যাচ্ছে। ছায়ামূর্তি বলে উঠল, "আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না পরিমল। তাই তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম। কিন্তু আমার উপায়ও নেই। আমাকে যেতে হবে। তবুও আমি আসব, মাঝে মধ্যে তোমার সঙ্গে দেখা করে যাব।" পরিমল বাকরুদ্ধ হয়ে রইল। হঠাৎই তার খেয়াল হল, কাবেরীর অশরীরী ছায়ামূর্তিটা যেন বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। সে ডেকে উঠল, "কাবেরী, কাবেরী, যেও না, দাঁড়াও।" উত্তর ভেসে এল, "আমি আবার আসব, তুমি যতদিন না নিজে থেকে আমার কাছে আসছ।" কাবেরীর অশরীরী ছায়ামূর্তিটা বাতাসে মিলিয়ে গেল।

বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে বিছানায় বসে থাকার পর পরিমলের খেয়াল হল, ভোর হয়ে এসেছে।

No comments:

Post a Comment