মনটা বড়ই বিষণ্ণ হয়ে পড়ল প্রসেনজিতের। ঢাকুরিয়া লেকের একটা বেঞ্চিতে বসে রয়েছে সে। চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঝিলের ফুরফুরে হাওয়া, কিছুই তাকে আর আকর্ষণ করছে না। কিছুদিন আগেও সে প্রমিতার সঙ্গে এই বেঞ্চিতেই পাশাপাশি বসেছিল। তখন পরিস্থিতি ছিল একরকম। এখন...... পুরোপুরিই অন্যরকম। এতো বছরের প্রেম আর ভালবাসার এই প্রতিদান? পারল কি করে প্রমিতা, যাকে সে নিজের জীবনের থেকেও বেশি মনে করে এসেছে?
কাল রাত্রেই ফোনটা এসেছিল। “সরি প্রসেনজিৎ, এতোদিন আমাদের মধ্যে যা হয়ে এসেছে, সেটা প্লিজ ভুলে যাও। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর আমি বাবার মতের বিরুদ্ধে যেতে পারব না।“ কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিয়েছিল। রিং ব্যাক করা সত্ত্বেও আর রিসিভ করেনি।
সন্ধ্যে ঘনিয়ে এল। আস্তে আস্তে ঢাকুরিয়া লেক ফাঁকা হয়ে আসছে। তবুও বসে রইল সে। মনের ভিতরে যে ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছে, সেটা কিছুটা প্রশমন করতেই বোধহয়। কিন্তু সময় যতই কাটছে, আগুন নেভা তো দুরের কথা, আস্তে আস্তে সেটা যেন একটা দাবানলের রুপ নিচ্ছে। না, এতদিন সে যাকে এতো ভালবেসে এসেছে, তাকে অন্য কেউ পাবে, এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। দরকার হলে সেই অন্য পুরুষকে সে এই দুনিয়া থেকে......
প্রায় সাতটা বাজতে চলল। ঝোলাব্যাগটা আলগোছে কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে প্রসেনজিৎ ঢিমেতালে বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল। হঠাৎ সে এতোটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পড়েছে, সে যেন এটা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। ভালবাসায় আঘাত হয়ত তাকে নৃশংস করে তুলছে, তার ভিতরের আদিম রিপুটাকে জাগিয়ে তুলছে।
দুএকদিনের মধ্যেই প্রমিতার হবু বরের ব্যাপারে সবই জানতে পারল প্রসেনজিৎ। প্রমিতাদের হাউসিং কমপ্লেক্সেই সে থাকে এবং তার বাবা ও প্রমিতার বাবা বাল্যবন্ধু। বিদেশ থেকে ম্যানেজমেন্ট পাশ করে আসা ছেলে, এখানেই কোন একটি নামকরা প্রাইভেট ব্যাঙ্কে উচ্চপদস্থ র্যাঙ্কে চাকরি করে। এই জন্যেই কি প্রমিতা তার সঙ্গে এইরকম করল? সে একটা বেসরকারি স্কুলে পার্ট-টাইম টিচার বলেই কি তার সঙ্গে এই রকম হল? তাহলে কি পুরো ব্যাপারটাই প্রেমের নাটক?
সে ঠিক করেই ফেলেছে কি করবে। আর দুয়েক মাসের মধ্যেই বিয়ে, আর প্রমিতা তার হবু স্বামীর সঙ্গে নাকি প্রায়ই শপিঙে বেরোচ্ছে। শুধু একটু সুযোগের অপেক্ষা। পাড়ার এক কুখ্যাত গুণ্ডার থেকে অ্যাসিড বাল্বটা সে জোগাড় করে ফেলেছে। তবে জায়গাটা একটু নির্জন না হলে হবে না। ধরা পড়ে যাবার ভয় আছে।
সুযোগটা একদিন হাতে নাতেই পেয়ে গেল প্রসেনজিৎ। রাসবিহারী থেকেই দুজনকে অনুসরণ করছিল সে। বিবেকানন্দ পার্কের কাছটা সন্ধ্যের পর অনেকটাই নির্জন হয়ে যায়। ভাড়া করা বাইকটা কাজ হাসিল হওয়ার পর পালিয়ে যেতে কাজ দেবে। হেলমেট পরে রয়েছে, সুতরাং তাকে কেউ চিনতে পারবে না। আরেকটু, আরেকটু কাছে আসুক দুজনে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে পুরো উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। ব্যাস, দুজনেই একদম সামনে এসে পড়েছে। আর দেরি নয়। অ্যাসিড বাল্বটা সাইডব্যাগ থেকে বার করে বিদ্যুৎবেগে সে প্রমিতার হবু স্বামীর মুখে ছুঁড়ে মেরেই আর দাঁড়াল না। নারী পুরুষের সম্মিলিত চিৎকারে চারিদিকের বাতাস ভারি হয়ে উঠল। কিন্তু সে কর্ণপাত না করে ঝড়ের বেগে বাইক চালিয়ে অকুস্থল থেকে বেরিয়ে গেল।
সপ্তাহ দুই পরের কথা। কাগজের এক কোণায় প্রমিতার হবু স্বামীর মৃত্যুসংবাদটা বেরিয়েছে। বহু চেষ্টা করেও ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হননি। পুলিস হন্যে হয়ে খুনিকে খুঁজছে কিন্তু এখনো সফল হয়নি। মনে একটা অদ্ভুত পরিতৃপ্তি অনুভব করল প্রসেনজিৎ। এই আনন্দে সে আজ প্রচুর পান করবে। শহরের এক নামকরা পানশালাতে ঢুকে নিজের পছন্দমত ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিল সে। মনের আনন্দে পান করে চলল। পান করতে করতে ঘড়ির কাঁটার দিকে খেয়ালই নেই। পানশালার মালিক দুএকবার তাড়া লাগিয়ে যখন বলল যে বন্ধ করার টাইম হয়ে গেছে তখন তার খেয়াল হল। টলতে টলতে সে বাড়ির পথে রওনা হল। আস্তে আস্তে সে সেই জায়গাটায় পৌঁছল যেখানে সে অ্যাসিড বাল্বের হামলা করেছিল। পার্কের রেলিঙের ওপর ভর দিয়ে একটু দাঁড়াল সে। একটু দম নিল। দূরে কে যেন একটা আসছে। পাত্তা দিল না সে। কিন্তু লোকটা যেন তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কাঁধে একটা সাইডব্যাগও মনে হচ্ছে আছে। নেশার্ত চোখে সে মুখটা বোঝার চেষ্টা করল। একি? এতো প্রমিতার হবু স্বামীর মুখ, একেবারে অবিকল। কি করে হয়? সে তো মারা গেছে, আজকের কাগজ তো তাই বলছে। কিছু বোঝার আগেই তরল আগুনের মত কিছু যেন তার মুখে কেউ ছুঁড়ে মারল। উফফ, অসহ্য, অবর্ণনীয় যন্ত্রণা। চারিদিক আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে গেল প্রসেনজিতের কাছে।
দুই সপ্তাহ পরের কথা। কাগজের এক কোণায় প্রসেনজিতের মৃত্যুসংবাদটা বেরিয়েছে। যমে মানুষে লড়াই করেও ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হননি। পুলিস হন্যে হয়ে খুনিকে খুঁজছে কিন্তু এখনো কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কাল রাত্রেই ফোনটা এসেছিল। “সরি প্রসেনজিৎ, এতোদিন আমাদের মধ্যে যা হয়ে এসেছে, সেটা প্লিজ ভুলে যাও। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর আমি বাবার মতের বিরুদ্ধে যেতে পারব না।“ কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিয়েছিল। রিং ব্যাক করা সত্ত্বেও আর রিসিভ করেনি।
সন্ধ্যে ঘনিয়ে এল। আস্তে আস্তে ঢাকুরিয়া লেক ফাঁকা হয়ে আসছে। তবুও বসে রইল সে। মনের ভিতরে যে ধিকি ধিকি আগুন জ্বলছে, সেটা কিছুটা প্রশমন করতেই বোধহয়। কিন্তু সময় যতই কাটছে, আগুন নেভা তো দুরের কথা, আস্তে আস্তে সেটা যেন একটা দাবানলের রুপ নিচ্ছে। না, এতদিন সে যাকে এতো ভালবেসে এসেছে, তাকে অন্য কেউ পাবে, এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। দরকার হলে সেই অন্য পুরুষকে সে এই দুনিয়া থেকে......
প্রায় সাতটা বাজতে চলল। ঝোলাব্যাগটা আলগোছে কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে প্রসেনজিৎ ঢিমেতালে বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল। হঠাৎ সে এতোটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পড়েছে, সে যেন এটা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। ভালবাসায় আঘাত হয়ত তাকে নৃশংস করে তুলছে, তার ভিতরের আদিম রিপুটাকে জাগিয়ে তুলছে।
দুএকদিনের মধ্যেই প্রমিতার হবু বরের ব্যাপারে সবই জানতে পারল প্রসেনজিৎ। প্রমিতাদের হাউসিং কমপ্লেক্সেই সে থাকে এবং তার বাবা ও প্রমিতার বাবা বাল্যবন্ধু। বিদেশ থেকে ম্যানেজমেন্ট পাশ করে আসা ছেলে, এখানেই কোন একটি নামকরা প্রাইভেট ব্যাঙ্কে উচ্চপদস্থ র্যাঙ্কে চাকরি করে। এই জন্যেই কি প্রমিতা তার সঙ্গে এইরকম করল? সে একটা বেসরকারি স্কুলে পার্ট-টাইম টিচার বলেই কি তার সঙ্গে এই রকম হল? তাহলে কি পুরো ব্যাপারটাই প্রেমের নাটক?
সে ঠিক করেই ফেলেছে কি করবে। আর দুয়েক মাসের মধ্যেই বিয়ে, আর প্রমিতা তার হবু স্বামীর সঙ্গে নাকি প্রায়ই শপিঙে বেরোচ্ছে। শুধু একটু সুযোগের অপেক্ষা। পাড়ার এক কুখ্যাত গুণ্ডার থেকে অ্যাসিড বাল্বটা সে জোগাড় করে ফেলেছে। তবে জায়গাটা একটু নির্জন না হলে হবে না। ধরা পড়ে যাবার ভয় আছে।
সুযোগটা একদিন হাতে নাতেই পেয়ে গেল প্রসেনজিৎ। রাসবিহারী থেকেই দুজনকে অনুসরণ করছিল সে। বিবেকানন্দ পার্কের কাছটা সন্ধ্যের পর অনেকটাই নির্জন হয়ে যায়। ভাড়া করা বাইকটা কাজ হাসিল হওয়ার পর পালিয়ে যেতে কাজ দেবে। হেলমেট পরে রয়েছে, সুতরাং তাকে কেউ চিনতে পারবে না। আরেকটু, আরেকটু কাছে আসুক দুজনে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে পুরো উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। ব্যাস, দুজনেই একদম সামনে এসে পড়েছে। আর দেরি নয়। অ্যাসিড বাল্বটা সাইডব্যাগ থেকে বার করে বিদ্যুৎবেগে সে প্রমিতার হবু স্বামীর মুখে ছুঁড়ে মেরেই আর দাঁড়াল না। নারী পুরুষের সম্মিলিত চিৎকারে চারিদিকের বাতাস ভারি হয়ে উঠল। কিন্তু সে কর্ণপাত না করে ঝড়ের বেগে বাইক চালিয়ে অকুস্থল থেকে বেরিয়ে গেল।
সপ্তাহ দুই পরের কথা। কাগজের এক কোণায় প্রমিতার হবু স্বামীর মৃত্যুসংবাদটা বেরিয়েছে। বহু চেষ্টা করেও ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হননি। পুলিস হন্যে হয়ে খুনিকে খুঁজছে কিন্তু এখনো সফল হয়নি। মনে একটা অদ্ভুত পরিতৃপ্তি অনুভব করল প্রসেনজিৎ। এই আনন্দে সে আজ প্রচুর পান করবে। শহরের এক নামকরা পানশালাতে ঢুকে নিজের পছন্দমত ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিল সে। মনের আনন্দে পান করে চলল। পান করতে করতে ঘড়ির কাঁটার দিকে খেয়ালই নেই। পানশালার মালিক দুএকবার তাড়া লাগিয়ে যখন বলল যে বন্ধ করার টাইম হয়ে গেছে তখন তার খেয়াল হল। টলতে টলতে সে বাড়ির পথে রওনা হল। আস্তে আস্তে সে সেই জায়গাটায় পৌঁছল যেখানে সে অ্যাসিড বাল্বের হামলা করেছিল। পার্কের রেলিঙের ওপর ভর দিয়ে একটু দাঁড়াল সে। একটু দম নিল। দূরে কে যেন একটা আসছে। পাত্তা দিল না সে। কিন্তু লোকটা যেন তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কাঁধে একটা সাইডব্যাগও মনে হচ্ছে আছে। নেশার্ত চোখে সে মুখটা বোঝার চেষ্টা করল। একি? এতো প্রমিতার হবু স্বামীর মুখ, একেবারে অবিকল। কি করে হয়? সে তো মারা গেছে, আজকের কাগজ তো তাই বলছে। কিছু বোঝার আগেই তরল আগুনের মত কিছু যেন তার মুখে কেউ ছুঁড়ে মারল। উফফ, অসহ্য, অবর্ণনীয় যন্ত্রণা। চারিদিক আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে গেল প্রসেনজিতের কাছে।
দুই সপ্তাহ পরের কথা। কাগজের এক কোণায় প্রসেনজিতের মৃত্যুসংবাদটা বেরিয়েছে। যমে মানুষে লড়াই করেও ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হননি। পুলিস হন্যে হয়ে খুনিকে খুঁজছে কিন্তু এখনো কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
No comments:
Post a Comment